বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে (১-৫)

শিরোনাম দেখেই বুঝতে পারছেন কি বিষয়ে লিখছি।তবে আমি কোন গবেষক নই।একজন উৎসাহি পাঠক বলতে পারেন।বেশ কিছুদিন আগেই আমি একটা বই পড়েছিলাম-‘ইতিহাসের রক্ত পলাশ পনেরই আগস্ট পচাত্তর’।

লিখেছেন আবদুল গাফফার চৌধুরী।চিনতে পেরেছেন এনাকে?

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী’-গানের গীতিকার যিনি ২১ ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা ভংগের সেই মিছিলে গুলি বিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন।পরবর্তীতে তিনি সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন।মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে’-কর্মরত ছিলেন।তিনি বঙ্গবন্ধুর একজন প্রকৃত শুভাকাংখি ছিলেন যিনি সরকারের কোন কাজ পছন্দ না হলে সরাসরি সমালোচনা করতে কিংবা তা নিয়ে পত্রিকায় লিখতে দ্বিধা করতেন না।তাই তার লেখা বইটি যে প্রভাব মুক্ত এবং সত্য সেটা স্পষ্ট।

আমি অনেক খুজেও বইটি ইন্টারনেটে পাইনি।কিন্তু আমার মনে হয়েছে বই টি সবার পড়া দরকার।কারণ এতে করে অনেক অমীমাংসিত ব্যাপার,অনেক প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার হবে।সেই সময়ের ঘটনা এবং বঙ্গবন্ধু কে কেন নিহত হতে হল সেই প্রেক্ষাপট বিস্তারিত বোঝা সম্ভব হবে।আমি যেহেতু বইটির কোন লিঙ্ক দিতে পারছিনা তাই আমার ইচ্ছা বইটি থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে সবাই কে জানাবো।যাদের এটা নিয়ে কোন আগ্রহ নেই তারা নির্দ্বিধায় আমাকে জানাবেন,আমি পরবর্তী লেখা গুলো আর তাদের ট্যাগ করবনা।যারা এই বিষয়ে জানতে চান তারাও জানাবেন লেখা কেমন লাগছে।

 

আজ বইয়ের মাঝামাঝি জায়গা থেকে শুরু করব।মুজিব চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন মস্কো তে।সেখান থেকে এসে গেলেন ইন্দিরা গান্ধির সাথে দেখা করতে।অপর দিকে ঠিক একই সময় ভুট্টো গেলেন পিকিং এ।অর্থাৎ একদিকে ভারত-বাংলাদেশ-রাশিয়া অন্য দিকে পাকিস্তান-চিন-আমেরিকা।

দেশে ফিরে গাফফার চৌধুরীর সাথে এ বিষয়ে তার কথোপকথন হয়।তার কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে দিচ্ছি।

 

“বঙ্গবন্ধু বললেনঃবাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেয়ায় ভারত উপমহাদেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য সম্পূর্ণ বদলে গেছে।এই বাস্তবতা নিক্সন আডমিনিস্ট্রেশন মেনে নিতে পারছেনা।তারা চেয়েছিল পাকিস্তান ও বাংলাদেশ কে মিলিত ভাবে তারা ভারত মহাসাগরে নৌঘাটি স্থাপন ও ভারতে সোভিয়েত প্রভাব হ্রাসে ব্যবহার করবে।ভারত ও সোভিয়েত ইয়ুনিয়ন মিলিত ভাবে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা লাভে সাহায্য করায় তাদের এই পরিকল্পনা ভন্ডুল হয়ে গেছে।পাকিস্তানের সাথে জয় লাভ করায় ভারত এশিয়ার সাব-সুপার পাওয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।এটা আমেরিকা চিন কারোরি মনঃপূত ন্য।পরাজিত ও দুর্বল পাকিস্তান কে দিয়ে ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।এজন্য চীন কে সঙ্গে টানা হয়েছে।অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরে ডানপন্থী ও সাম্প্রদায়িক দল গুলোকে সাহায্য জুগিয়ে ইন্দিরা সরকার কে অপসারণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।”

 

এরপর বঙ্গবন্ধু বর্ননা করেন কিভাবে মার্কিন সরকার একটা দেশের সরকারের পতন ঘটানোর কাজ করে।আমি নিজের ভাষায় সেটা সহজ করে বলছি।মার্কিনীদের সিআইএ এই কাজ টি করে থাকে।প্রথমে তারা বুদ্ধিজীবী,সাংবাদিক ও প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম গুলোকে হাত করে,তাদের এজেন্ট বসিয়ে তার মাধ্যমে সরকারের বিরূদ্ধে মিথ্যা,অর্ধ-সত্য কথা প্রচার করে।এরপর দেশের শ্রমিক শ্রেণী কে উসকে দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থার তৈরি করে।এই কাজে সাহায্য করে দেশের মধ্যে থাকা ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদ ও সাম্প্রদায়িক মহল।এভাবে তারা ক্রমান্বয়ে সরকারের জনপ্রিয়তা কমাতে থাকে।যখন সরকার জনপ্রিয়তা হারায় তখন গণতন্ত্র রক্ষার নাম করে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকারের পতন ঘটায়।বিষয় ট আরো জটিল ও প্যাচালো।আমি সাধারণ ভাবে মূল বিষয় টি বললাম।

আমরা যদি অতি সাম্প্রতিক ঘটনা গুলো দেখি(মিশরের ঘটনা,আরব-বসন্ত,লিবিয়া ইত্যাদি) এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড ও দেখি তাহলে বুঝব ঠিক এই ঘটনা গুলোই ঘটেছে।স্বয়ং বঙ্গবন্ধু এটা বুঝেছিলেন এবং তার প্রতিকার ও করতে চেয়েছিলেন।আবার বই এ ফিরে যাই।

 

“বঙ্গবন্ধু বলছেনঃভারতে যদি গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটে তাহলে সারা এশিয়ায় মিলিটারী-ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠা হবে।চলবে যুদ্ধ,অস্ত্র প্রতিযোগীতা।সামরিক খাতে বিনা প্রয়োজনে কোটি কোটি টাকা খরচ হবে।জনসাধারণের ভাগ্য উন্নয়ন,দারিদ্র্য বিমোচনের পরিকল্পনা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।যদি দরকার হয় কিছুদিনের জন্য রাজনৈতিক এক নায়কত্ব প্রতিষ্ঠার দ্বারা এই মিলিটারি-ফ্যাসিজম এর অভিশাপ রুখতে হবে।

শেষ কথাটি খেয়াল করুন।আজীবন ক্ষমতায় থাকার বাসনায় নয়,তৎকালীন বিরূপ পরিস্থিতি সামাল দিতেই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলান।

পরবর্তী কথা গুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ।খেয়াল করুন-

 

আমি অবশ্য সব রকম একনায়কত্বের বিরোধী।কিন্তু রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি বলেও একটা কথা আছে।শহীদ সোহরাওয়ার্দী বেঁচে থাকতেই আমি সমাজতন্ত্র বিশ্বাসি হয়েছি।কিন্তু আওয়ামি লীগের লক্ষ সমাজতন্ত্র এই কথাটি বলার জন্য আমাকে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।গণতন্ত্র আমার লক্ষ।কিন্তু তা দ্বি-দলীয় সেক্যুলার গণতন্ত্র বা যার যা খুশি করার গণতন্ত্র নয়।সাম্প্রদায়িক শ্লোগান বিনা বাধায় তোলার অধিকার দেয়াকে আমি গণতান্ত্রিক অধিকার বলে মনে করিনা।উন্নত দেশে গণতান্ত্রিক সরকারের কাজ আরো একটি,জনসাধারণকে গণতান্ত্রিক চেতনা ও শিক্ষায় আরো শিক্ষিত করে তোলা।এজন্য দরকার হলে একটি অনুন্নত দেশে গণতান্ত্রিক সরকারকে সময় সময় অত্যন্ত কঠোর হতে হবে।মিলিটারি ফ্যাসিবাদের চাইতে রাজনৈতিক একনায়কত্ব সাময়িক ভাবে ভাল এজন্য যে,রাজনৈতিক একনায়কত্বের ভিত্তি জনগণ ও জনগনের রাজনীতি।সুতরাং জনগণের সমর্থন ও ভাল-মন্দের দিকে তাঁকে লক্ষ রাখতে হবে।অন্যদিকে মিলিটারি এর শক্তি হল অস্ত্র ও সমাজের প্রগতি-বিরোধী শক্তি।এই দুয়ের মিলনে কোন দেশের ই মঙ্গল হতে পারেনা।

আজ আর বেশি দীর্ঘ করছিনা।এর পরে লিখব খন্দকার মুশ্তাকের সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক ও তাজ-উদ্দীন আহমেদ কে নিয়ে।

আজকে আমি এই অংশ টুকু সামনে নিয়ে এলাম এটা দেখানোর জন্য,যারা বলেন মুজিব ক্ষমতার লোভে একনায়কত্ব তথা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে তারা কিছু না জেনেই নিছক শোনা কথা বলেন।সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা বা এগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে চান না।সে সময় কেন বাকশাল হল,কেন অনেক পত্রিকা বাতিল করা হল-সব প্রশ্নের উত্তর ই আমি দেয়ার চেষ্টা করব।কেউ যেন মনে না করেন আমি মন গড়া কথা লিখছি কিংবা একটি মাত্র বইয়ের উপর নির্ভর করছি।লেখা শেষ হবার পর আমি সব গুলো সূত্র উল্লেখ করব।

সবাই হয়তো কষ্ট করে বইটা পড়বেন না,তাই আমি ঠিক করলাম বিশেষ বিষয় গুলো সামনে নিয়ে আসব।কারণ অপপ্রচারের জবাব সত্য তথ্য দিয়েই দিতে হয়।

 

 

গত লেখায় আমি বলেছিলাম তৎকালীন উপমহাদেশীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাধ্য হয়ে পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য সাময়িক ভাবে বঙ্গবন্ধু কেন একনায়ক তন্ত্র প্রতিষ্ঠার চিন্তা ভাবনা করছিলেন এবং সে সংক্রান্ত কি কথোপকথন চৌধুরীর সাথে তাঁর হয়েছিল।বইটির একটি জায়গায় খন্দকার মুশতাক আহমেদের ভূমিকা,বঙ্গবন্ধুর সাথে তার সম্পর্ক এবং তাজউদ্দীন আহমেদের ভূমিকা নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।বলেছিলাম সেটা নিয়ে আজকের লেখা।

 

খন্দকার মুশতাক আহমেদের সাথে ইতিহাসের মির জাফরের তুলনা হয়।তাদের কাজ কর্ম তো বটেই লেখক বলেছেন দুজনের শারীরিক গড়নেও নাকি সাদৃশ্য ছিল ! মুশতাক পল্টিবাজ রাজনীতিবিদ ছিল (ইচ্ছা করেই আমি ‘ছিলেন’ ব্যবহার করছি না)।

সুবিধাবাদী হিসিবে রাজনৈতিক জিবনের শুরু থেকেই দল বদল করেছে সে।নীতি ও আদর্শের দিক থেকে সে ছিল ডান পন্থি,সাম্প্রদায়িক ও মার্কিন ঘেষা।

 

লেখক বইয়ের ১৩ তম পরিচ্ছেদে বলেছেন মশতাক সম্পর্কে।সেখান থেকে হুবহু তুলে দিচ্ছি।

 

“মুজিব জননি বেগম সাহেরা খাতুন মারা গেলেন ৩১ মে বিকালে।সেদিন সন্ধ্যায় আমাকে খবর টা জানালেন এম,আর আখতার মুকুল।শেখ মুজিব গেলেন টুংগি পাড়ায় মাকে দেখার জন্য।শেষ দেখা।সঙ্গে জুটলেন দুই মন্ত্রি-খন্দকার মুশতাক আহমেদ ও তাহের উদ্দিন ঠাকুর।

শেখ মুজিব তাঁর মায়ের জন্য যত কাঁদলেন না,তার থেকে বেশি কাঁদলেন মুশতাক।সেই দৃশ্য দেখে আমি প্রথমে ভুল বুঝেছিলাম।ভেবেছিলাম মুশতাকের কেউ সম্ভবত মারা গেছে।শেখ মুজিবের একজন দেহরক্ষি কে কথাটা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেনঃনা না উনি বঙ্গবন্ধুর মায়ের মৃত্যুতে কাদছেন।

শুধু কেঁদেই মুশতাক ক্ষান্ত হলেন না।শেখ মুজিবের সঙ্গে গেলেন টুংগি পাড়ায়,সারা পথ নিজেই কাঁদলেন।

শেখ মুজিবের সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে মুশতাক ছিলেন তাঁর একেবারে ছায়া সহচর।তার মনে যাই থাকুক ,মুজিবের সামনে তিনি থাকতেন বান্দা হাজির মনভাব নিয়ে।মন ভেজানো কথা বলতেন।

একবার দৈনিক ‘জনপদ’এ আমার একটা লেখায় মুজিব চটে গিয়ে আমাকে গণভবনে ডেকে পাঠালেন।গিয়ে দেখি মুশতাক বসে আছে।’জনপদের’ বিরূদ্ধে দু-একটা কথা বললেন মুজিব কে খুশি করার জন্য।আবার এই মুশতাক ই বাইরে দেখা হলে আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন।মুজিবের কোন কোন কাজের সমালোচনা করার জন্য আমার প্রশংসা করেছেন।বিচিত্র এই মুশতাক চরিত্র।

মুশতাকের রাজনৈতিক চরিত্রেও স্থিরতা বলে কিছু নেই।১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নোমিনেশন না পেয়ে প্রথম হক ভাসানীর নেতৃত্বের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন।আওয়ামি লীগ কে যখন অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান রূপে পুনর্গঠন করার জন্য মুজিব-ভাসানী এক যোগে কাজ করছেন,তখন তিনি আওয়ামি লীগ থেকে ত্যাগ করেন এবং আওয়ামি লীগের ডানপন্থি ও সাম্প্রদায়িক অংশের সাথে হাত মিলিয়ে আওয়ামি মুসলিম লীগ গঠনের চেষ্টা করেন।

আইন পরিষদে সরকারি হুইপ হবার লোভে আবার তিনি আওয়ামি পার্লামেন্টারি পার্টির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন এবং কৃষক শ্রমিক পার্টির সরকারে গিয়ে ঢোকেন।

সারা জীবন তিনি প্রতিক্রিয়াশীল ডানপন্থি ও সাম্প্রদায়িকতাবাদ কে সমর্থন জানিয়েছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত সমর্থন লাভের জন্য আওয়ামি লীগের প্রগতিশীল অংশের সাথে থেকেছেন।প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠি তাকে ট্রয়ের ঘোড়ার মত প্রগতিশীল অংশে ব্যবহার করেছে।”

 

উপরের অংশ থেকে আমরা মুশতাকের রাজনৈতিক চরিত্র বুঝতে পারলাম।এবার মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভূমিকা নিয়ে আলোকপাত করছি।

 

“মুশতাকের সব থেকে বড় বিশ্বাস ঘাতকতা ১৯৭১ এ।তিনি মুজিব নগরে বসে মাহবুব আলম চাষী,তাহের উদ্দিন ঠাকুর প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে একটি চক্র তৈরি করেন এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করেন।মুক্তিযুদ্ধ বানচাল করে পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন গঠন করাই ছিল তাদের লক্ষ।

মুক্তিযুদ্ধ যখন পূর্ণাংগ রূপ নিতে চলেছে তখন মুশতাক গ্রুপ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য একটি প্রচারপত্র বিলি করে।এই প্রচার পত্র টির শিরোনাম ছিল ইন্ডিপেন্ডেন্স অর মুজিব? মুজিব না স্বাধীনতা? এই প্রচার পত্র টির মূল বক্তব্য ছিল

আমরা যদি পাকিস্তানের সাথে সর্বাত্মক যুদ্ধ করি তাহলে পাকিস্তানীরা কারাগারে মুজিব কে হত্যা করবে।শেখ মুজিব ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে যাবে।সুতরাং স্বাধীনতার আগে মুজিবের মুক্তি দরকার এবং মুক্তির পর পাকিস্তানের সাথে আলোচনা দরকার।

 

এই প্রচার পত্রের মাধ্যমে মুশতাক এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলেন।তারা প্রচার করছিল যে তাজউদ্দিন চাইছেন না মুজিবের মুক্তি হোক।তিনি চান মুজিব কে সড়িয়ে নিজেই রাষ্ট্রপ্রধান হতে।”

 

তাজউদ্দীনের বিরূদ্ধে প্রচারণা তখন থেকেই শুরু।এই প্রচার পত্রে মুক্তিযোদ্ধা দের মধ্যে ব্যাপক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।এই প্রচারণায় মুজিব পরিবারের অনেকে বিভ্রান্ত হন।এমন কি মুজিব দেশে ফেরার পর ও তাঁকে বলা হয় যে তাজ-উদ্দীন তাঁকে সড়িয়ে,পাকিস্তানে তার মৃত্যু ঘটিয়ে দেশের ভাগ্যবিধাতা হতে চেয়েছিলান।লেখক বলেছেন,

“বঙ্গবন্ধু এই অপপ্রচার বিশ্বাস করেছিলেন কিনা,আমার জানা নেই।”

 

মুশতাকের আরো অপকর্ম আছে।ঐ সময় সে বিদেশে যুদ্ধ বিরোধী প্রচারণা চালায়।বিভিন্ন পত্রিকায় বিভ্রান্তি কর বিজ্ঞপ্তি পাঠায়।বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর মশতাক গ্রুপের বিচার হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তাজ-উদ্দীন তাকে ক্ষমা করে। 

আবার বই এ ফিরে যাই।

 

“১৯৭২ সালে মুজিব দেশে ফিরে এসে মুশতাক ও তার সাঙ্গোপাঙ্গো দের ক্ষমা করে দেন।১৯৫৫ থেকে একবার নয়,বারবার মুজিব ক্ষমা করেছেন মুশতাক কে,ভুলে গেছেন বিশ্বাস ঘাতকতা…।

শেখ মুজিবের মায়ের মৃত্যুতে যিনি কেঁদে চোখ ফুলিয়েছিলেন,মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সেই মুজিবের এবং তাঁর স্ত্রী-পুত্র পরিবারের নৃশংস হত্যা কান্ডে উল্লাস প্রকাশ করে হত্যাকারি দের খেতাব দিলেন ‘সূর্য সন্তান’ এবং এই বর্বরতা কে আখ্যা দিলেন ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা বলে।

আরো বিস্ময়ের কথা যে ঢাকায় যে বাড়িতে বসে মুজিব হত্যার ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত ঠিক সেই এলাকার খুব কাছের একটি বাড়িতে বসে আড়াইশো বছর আগে সিরাজ হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়।”

 

এখানে হয়তো অনেকের প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক,মুজিব কেন বারবার মুশতাক কে ক্ষমা করেছেন?শুধু মুশতাক কে না আরো অনেক কেই তিনি ক্ষমা করেছেন।এটাই হল মুজিবের সব থেকে বড় দুর্বলতা।যার চরম বিনিময় তাঁকে দিতে হয়েছে।মুজিবের এই ক্ষমা করার ঘটনা লিখব এর পরের পর্বে।

 

তাজ-উদ্দীন আহমেদ ছিলেন মুজিবের যোগ্য সেনাপতি।তিনি না থাকলে মুজিব বিহীন ৭১ এ বাংলাদেশ সৃষ্টি হত না।তিনি কখনই মুজিব কে সড়িয়ে নেতা হতে চাননি।ছায়ার মত বঙ্গবন্ধুর সাথে থেকে কাজ করে গেছেন।তাজউদ্দীন কে পাকিস্তানি শাসকেরাও ভয় পেতেন।তার একটি ঘটনা লেখক আমাদের জানাবেন।

 

“১৯৭১ সালে মুজিব ইয়াহিয়ার বৈঠকের রূদ্ধশ্বাস দিন গুলোর কথা।ভুট্টো এসেছেন ঢাকায়।আমরা কজন সাংবাদিক তাঁর সাথে দেখা করার অনুমতি পেয়েছি।আমাদের বেশি কিছু বলতে চাইলেন না।আমাদের উপস্থিতি ভুলে গিয়ে তাঁর এক সহকর্মীকে উর্দুতে বলে উঠলেনঃ আলোচনা বৈঠকে আমি মুজিব কে ভয় পাইনা।ইমোশনাল এপ্রোচে মুজিব কে কাবু করা যায়।কিন্তু তাঁর পিছনে ফাইল-বগলে চুপচাপ যে ‘নটরিয়াস’ লোকটি দাঁড়িয়ে থাকে তাকে কাবু করা শক্ত।দিস তাজুদ্দীন,আই টেল ইউ,উইল মাইট বি ইউর মেইন প্রবলেম।

আমি সঙ্গে সঙ্গে কথাটি নোট বুকে টুকে নিলাম।তখন বুঝতে পারিনি,কথাটি একদিন কত বড় ঐতিহাসিক সত্য হয়ে দাঁড়াবে।”

 

তাজুদ্দীন কে ভুট্টো ক্ষমা করেন নি।১৯৭১ এ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পাকিস্তানি দের পক্ষ থেকে ঢাকায় একটি প্রচারপত্র বিলি করা হয়।তাতে বলা হয়,

“তাজুদ্দিন আসলে ভারতীয় ব্রাহ্মন।মুসলমান নাম গ্রহণ করে তিনি আওয়ামি লীগে ঢুকেছেন পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় ষড়যন্ত্র সফল করার জন্য।”

 

১৯৭৫ সালে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে জেলে হত্যা করা হল।রটানো হল-তিনি জেলে বসে ভারতীয় কমিশনার কে গোপনে চিঠি পাঠিয়েছিলেন ভারতীয় সেনা বাহিনি আনার জন্য।

 

আজ আর দীর্ঘ করবনা।আজকে আমি মূলত তুলে ধরতে চেয়েছি মুশতাকের মত মির জাফরের ভূমিকা ও মুজিবের যোগ্য সেনাপতি তাজ-উদ্দিনের কিছু কথা।ঘটনা ক্রমে এদের দুজন ই আরো আসবেন সামনে।এরপরের লেখায় আমি তুলে ধরতে চেষ্টা করব মুজিবের ক্ষমা শীলতার কিছু উদাহরণ যা ছিল তাঁর বড় বড় ভুল এবং তাঁর বিরূদ্ধে কিছু অপপ্রচার এর জবাব দেয়ার চেষ্টা করব।

 

অপ্রাসঙ্গিক হলেও একটা বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই।

আজ আমি যেসব অপপ্রচারের কথা তুলে ধরেছি সেগুলো কি খুব পরিচিত না?

আজো এই ধরণের প্রচারণা চালিয়েই জামাত-শিবির ও তাদের দোসর রা আমাদের সাধারন মানুষ কে বিভ্রান্ত করে চলেছে না?

আগের অপপ্রচার গুলো রোধ করা গেলে হয়তো মুজিব-তাজুদ্দিনের এই পরিণতি ভোগ করতে হতনা।

আমরা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি চাইনা।

তাই এখন যে অপপ্রচার গুলো চলছে তা রোধ করা ও এর জবাব দেয়া আমাদের সবার নাগরিক দায়িত্ব।

 

 

বলেছিলাম আজ  তুলে ধরার চেষ্টা করব বঙ্গবন্ধুর কিছু ক্ষমার দৃষ্টান্ত এবং তার কুফল এবং তাঁর বিরূদ্ধে প্রচারিত কিছু অপপ্রচার আসলে কতটা সঠিক সেটা।অপ্রাসংগিক হলেও বলে রাখি আমি এই লেখাটির ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।ফেসবুকের পাশাপাশি একটি ব্লগেও আমি লেখাটি প্রকাশ করছি।সবাই আমাকে লেখাটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন,নানা রকম তথ্য দিয়ে সাহায্য করছেন,আরো রেফারেন্স দিচ্ছেন,ভুল-ভ্রান্তি ধরিয়ে দিচ্ছেন।সবার প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।আমি চেষ্টা করছি প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে।যেহেতু বিষয়টি অনেক জটিল এবং তাৎপর্যপূর্ণ তাই লেখাটি একটু সময় নিবেই,আশা করি সবাই সেটা ক্ষমার চোখে দেখবেন।

 

যাই হোক,গতকাল বলেছিলাম খন্দকার মুশতাক কে মুজিব বারবার ক্ষমা করে যাচ্ছিলেন।কিন্তু কেন?এটাই কি ওনার বৈশিষ্ট্য নাকি মুজিব ক্ষমা করতে বাধ্য হয়েছিলন?এরকম আরো কয়েক টি ঘটনা তুলে ধরছি যা আমি যে বইটির কথা বলেছি তাতে বলা হয়েছে।

 

লেখক বলছেন নিজের লোকদের কে তো বটেই শত্রুপক্ষের লোক দের ও মুজিব বারবার ক্ষমা করে গেছেন।একই বৈশিষ্ট্য ছিল ফজলুল হকেরঅ।লেখক আমাদের বলছেন,

 

“মাহমুদ আলী বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধীতা করে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার সাথে হাত মিলান।৭১ এ যখন বাংলাদেশে বর্বর গণহত্যা চলছে ,তখন পাকিস্তানের সব চাইতে বড় দোসর ছিলেন মাহমুদ আলী।তার মেয়ে তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে যে অশালীন ভাষায় স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুজিব বিরোধী প্রচারণা চালিয়েছেন,তা নিজের কানে না শুনলে বিশ্বাস করা কঠিন।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মাহমুদ আলী দেশ ছেড়ে পালালেন।প্রথমে লন্ডন,পরে নিউইয়র্ক,তারপর পাকিস্তানে।কিন্তু তার স্ত্রী-পুত্র তখনও ঢাকায়।অনেকেই আশংকা করেছিলেন যে ক্রোধান্ধ জনতার হাতে তারা লাঞ্ছিত হবে অথবা তার কন্যা রত্ন টিকে কোলাবরেটর হিসেবে জেলে পাঠানো হবে।কিন্তু মুজিব দেশে ফিরে কিছুই হতে দিলেন না।পুলিশ কে আদেশ দিলেন মাহমুদ আলীর পরিবারের কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।বিশ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট দিলেন তাদের দেশ ত্যাগ করার জন্য।তারপর সকলের অগোচরে পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তায় তাদের বাংলাদেশ ত্যাগ করার ব্যবস্থা করলেন।

এটা যখন জানাজানি হল তখন লীগের নেতা এবং মুক্তিযোদ্ধা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন।

মুজিব তাদের শান্ত কন্ঠে বললেন,

মাহমুদ আলীকে হাতে পেলে বিচার হয়তো বিচার করতাম।কিন্তু তার ছেলেমেয়ে বা স্ত্রী কোন ক্ষতি হোক তা আমি চাই না।”

মাহমুদ আলীর স্ত্রী ছেলে মেয়েকে দেশে আটকে রেখে তিনি মাহমুদ আলী কে শিক্ষা দিতে পারতেন।পারতেন হামিদুল হক চৌধুরীর একমাত্র ছেলেকে জেলে আটকে রেখে হামিদুল হককে জব্দ করতে।তার ফল কি দাড়াল?মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বাংলাদেশের শত্রুরা তাঁর দশ বছরের শিশু -পুত্রকে,নববিবাহিতা পুত্রবধুকে হত্যা করতে দ্বিধা করেনি।

আর এই বর্বর হত্যা কান্ডে মাহমুদ আলী,হামিদুলের কি উল্লাস!”

 

এটা কি বঙ্গবন্ধুর উদারতা?আমি মনে করি এটা ছিল বঙ্গবন্ধুর দুর্বলতা।তার ভুল।

পাকিস্তানি দালাল সবুর খানের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।এই সবুর খান ঢাকার পতন হবার আগের দিন ও রেডিও তে পাকিস্তানের পক্ষে গলাবাজি করেছে।স্বাধীন হবার পর জনতা তাকে হত্যা করার জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছিল।সে থানায় আত্মসমর্পন করে এবং জেলে আশ্রয় গ্রহন করে।১৯৭৩ সালে দালাল আইনে তার বিচার শুরু হলে জেলে থাকাকালীন সে অসুস্থ হয়ে পরে।

 

লেখক বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষ হওয়ায় সবুরের আত্মীয়রা লেখক কে অনুরোধ করে যেন তিনি বংবন্ধুকে সবুরের জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেন।এই অনুরোধ বংবন্ধুকে আগেও জানানো হয়েছিল কিন্তু পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়েছিল সবুরের অসুস্থতা গুরুতর কিছু নয় বরং তা বাইরে যোগাযোগ করার বাহানা মাত্র।তারপর ও লেখক একদিন এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর সাথে কথা বলতে ৩২ নম্বরের বাসায় যান।তাদের মধ্যকার কথোপকথন নিচে তুলে দিচ্ছি।

 

“বঙ্গবন্ধু রাসেল কে সঙ্গে নিয়ে টিভি দেখছিলেন।আমাকে দেখে বললেনঃকি বারতা চৌধুরী?

বঙ্গবন্ধু মুডে ছিলেন।বললামঃযদি অভয় দেন তো বলি।

বললেনঃঅভয় দিলাম।

বললামঃজেলে সবুর খান অসুস্থ।তাকে কি চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে হস্তান্তর করা যায় না?

বঙ্গবন্ধু আমার কাছে এই অনুরোধ প্রত্যাশা করেননি।বিস্ময়ে চোখ কপালে তুলে বললেনঃদাড়াও দাঁড়াও ব্যাপারটা বুঝে নেই।গাফফার চৌধুরী এসেছে সবুর খানের জন্য অনুরোধ জানাতে!আসল কথাটা কি?

বললামঃএর মধ্যে কোন রাজনীতি নাই বংবন্ধু।শুনেছি সে অসুস্থ।একান্তই মানবিক কারণে এসেছি।

 

(এর পরে মুজিবের কথা গুলো তার চরিত্র বুঝতে সাহায্য করবে।খেয়াল করুন)

 

মুজিব সহানুভূতির স্বরে বললেনঃবিশ্বাস কর আমি এদের ছেড়ে দিতে চাই।আমার বিশ্বাস,ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে এরা দেশের বিরূদ্ধে যা করেছেন,তাতে এরা নিজেরাও অনুতপ্ত।তাছাড়া এদের বয়স হয়েছে।রাজনৈতিক ঝামেলায় জড়ানোর ইচ্ছা হয়তো এদের অনেকেরই নেই।জনসাধারণের ঘৃণা ও ক্রোধ এদের জীবন অভিশপ্ত করে তুলেছে।কি হবে এদের জেল খাটিয়ে?

বললামঃএই ব্যাপারে আমি আপনার সঙ্গে একমত নই।

মুজিব হেসে উঠলেন।বললেনঃএদিকে আবার সবুরের হয়ে ওকালতি করতে এসেছ?বেশ অনুরোধ রাখলাম।”

 

এটাই ছিল মুজিবের বৈশিষ্ট্য।তিনি ছিলেন অতিরিক্ত আবেগ প্রবণ।কেউ যদি তাঁর কাছে এসে কান্নাকাটি করে পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার ‘ভান’ করত তাহলেই তিনি গলে যেতেন।অপরাধ ক্ষমা করে দিতেন।যে সুবিধা টা ভাল ভাবেই নিয়েছে টাউট সুবিধাবাদি যারা বেশির ভাগ ছিলেন তাঁর নিজের দলেরই।এ প্রসঙ্গে আরো বিস্তর উদাহরণ দেয়া যায়,কিন্তু সেটা আমার উদ্দেশ্য নয়।আমার উদ্দেশ্য ছিল তাঁর চরিত্রের এই দিক টি তুলে ধরা যা হয়তো আপনারা বুঝতে পেরেছেন।

 

এবার দেখি কিছু প্রচলিত অপ্প্রচার নিয়ে একটু কথা বলা যায় কিনা।

 

১,যেহেতু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান তাই সেটা দিয়েই শুরু করা যাক।একটা কথা প্রচলিত আছে যে মুজিব যুদ্ধাপরাধীদের সাধারণ ক্ষমা করে দিয়েছেন এর পর আর কোন বিচার হতে পারেনা।

আসল কথা হল,১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর দালাল আইনে আটক যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই তাদের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক ৩৭ হাজারের অধিক ব্যক্তির ভেতর থেকে প্রায় ২৬ হাজার ছাড়া পায়। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার ৫ নং ধারায় বলা হয়, ‘যারা বর্ণিত আদেশের নিচের বর্ণিত ধারাসমূহে শাস্তিযোগ্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অথবা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে অথবা যাদের বিরুদ্ধে নিম্নোক্ত ধারা মোতাবেক কোনটি অথবা সব ক’টি অভিযোগ থাকবে। ধারাগুলো হলো: ১২১ (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো অথবা চালানোর চেষ্টা), ১২১ ক (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র), ১২৮ ক (রাষ্ট্রদ্রোহিতা), ৩০২ (হত্যা), ৩০৪ (হত্যার চেষ্টা), ৩৬৩ (অপহরণ),৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ) ৩৬৫ (আটক রাখার উদ্দেশ্যে অপহরণ),৩৬৮ (অপহৃত ব্যক্তিকে গুম ও আটক রাখা), ৩৭৬ (ধর্ষণ), ৩৯২ (দস্যুবৃত্তি), ৩৯৪ (দস্যুবৃত্তিকালে আঘাত), ৩৯৫ (ডাকাতি), ৩৯৬ (খুনসহ ডাকাতি),৩৯৭ (হত্যা অথবা মারাত্মক আঘাতসহ দস্যুবৃত্তি অথবা ডাকাতি), ৪৩৫ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে ক্ষতিসাধন),৪৩৬ (বাড়িঘর ধ্বংসের উদ্দেশ্যে আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার), ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪৩৬ (আগুন অথবা বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে কোন জলযানের ক্ষতিসাধন) অথবা এসব কাজে উৎসাহ দান। এসব অপরাধী কোনোভাবেই ক্ষমার যোগ্য নন।’

 

যারা উপরের প্যারাটি মনযোগ দিয়ে পড়েছেন তারা বুঝতেই পারছেন ‘মানবতা বিরোধী’ কোন অপরাধ ই ক্ষমা করা হয়নি।যারা এটা বিশ্বাস করতে চায়না তাদের বিশ্বাস করানোর দায় আমার পরেনি,যারা বিভ্রান্ত তাদের বিভ্রান্তি দূর করার জন্য এই প্রচেষ্টা।এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে এই লিঙ্ক গুলো থেকে ঘুরে আসুন।

https://www.google.com.bd/url?sa=t&rct=j&q=&esrc=s&source=web&cd=1&cad=rja&ved=0CCUQFjAA&url=http%3A%2F%2Fwww.amarblog.com%2Fomipial%2Fposts%2F111505&ei=QdoQUpLsA8jirAeMhoDwAQ&usg=AFQjCNHKCz_mkYrD4vAFQluFUPh2ROHcTQ&sig2=_AHI0it4rnoPHxyEOpIZHg

 

https://www.google.com.bd/url?sa=t&rct=j&q=&esrc=s&source=web&cd=2&cad=rja&ved=0CC0QFjAB&url=http%3A%2F%2Fbn.wikipedia.org%2Fwiki%2F%25E0%25A6%25A6%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B2%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B2_%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%2587%25E0%25A6%25A8_(%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25B6%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B7_%25E0%25A6%259F%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%2587%25E0%25A6%25AC%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25AF%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25A8%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B2)_%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%25A6%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B6_%25E0%25A7%25A7%25E0%25A7%25AF%25E0%25A7%25AD%25E0%25A7%25A8&ei=QdoQUpLsA8jirAeMhoDwAQ&usg=AFQjCNEKwMCfdP83SdgtRiDEl9DRxzNpQg&sig2=6mGB5gsQD2bNicSzCSwYWA

 

 

আমি এ বিষয়ে এই বইয়ে আলোচিত অংশ টি তুলে ধরতে চাই যা এই ঘটনার সব ধোয়াশা দূর করবে এবং এ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মনোভাব প্রকাশ করবে।

 

বঙ্গবন্ধু সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার এই বিজ্ঞপ্তি টি লিখে দেয়ার জন্য এই বইয়ের লেখক গাফফার চৌধুরী কে ডেকে পাঠান।সেখানে তাদের কথোপকথনের অংশ টি তুলে ধরছি।

 

“১৯৭৩ সালে ডিসেম্বর মাসে বিজয় দিবসের আগে বঙ্গবন্ধু আমাকে ডেকে পাঠান।তিনি আমাকে একান্তে ডেকে নিয়ে বলেন,এখনি একটা সরকারি ঘোষনার খসড়া তোমাকে লিখতে হবে।পাকিস্তানীদের কোলাবরেটর হিসাবে যারা দন্ডিত ও অভিযুক্ত ,সকলের জন্য ঢালাও ক্ষমা ঘোষনা করতে যাচ্ছি।

বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলাম পালের গোদাদের ও ছেড়ে দিবেন?

তিনি বললেন,হ্যা সকল কে।কেবল যাদের বিরূদ্ধে খুন,রাহাজানি,ঘরে আগুন দেয়া,নারী-হরণ বা ধর্ষন প্রভৃতির অভিযোগ আছে তারা ছাড়া পাবেনা। কেন তোমার মত নেই?

 

বললাম,না,নেই।অনেকেই অত্যাচারের ভয়ে নিজেদের ইচ্ছার বিরূদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের সাহায্য যোগাতে বাধ্য হয়েছিল,তাদের আপনি ক্ষমা করুন।কিন্তু পালের গোদাদের আপনি ক্ষমা করবেন না।

মুজিব হেসে বললেন,না তা হয়না।আমার আসনে বসলে তোমাকেও তাই করতে হত।আমিতো চেয়েছিলাম ,নব্বই হাজার পাকিস্তানি সৈন্য দের ছেড়ে দিয়ে অন্তত ১৯২ জন যুদ্ধাপরাধী অফিসারের বিচার করতে।তাও পেরেছি কি?আমি একটা ছোট্ট অনুন্নত দেশের নেতা।চারিদিকে উন্নত ও বড় শক্তি গুলোর চাপ।ইচ্ছা থাকলেই কি আর সব করা যায়?

চাপ কথাটির উপর তিনি বেশি জোড় দিলেন।”

 

লেখকের এই অংশ থেকে অনেক কিছুই স্পষ্ট।বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই।

 

২,বঙ্গবন্ধু ‘বাকশাল’ প্রবর্তন করে গণতন্ত্র হত্যা করেছেন।বেশ ভাল কথা।তো ঐ সময় দেশে দল ছিল কয়টা?একটাই তো?তাহলে নতুন করে এক দলীয় শাসন প্রবর্তন করার কি ছিল?এটা নিয়ে বিস্তারিত লিখতে গেলে এটার উপর ই একটা লেখা তৈরি করা লাগবে।আমি এটা নিয়ে আগেও লিখেছি।সবাইকে পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।এটা যে ঐ সময় বাংলাদেশের জন্য কতটা জরুরী ছিল আশা করি তা বুঝতে পারবেন।

https://www.facebook.com/rafee.shams/posts/507698749300470

 

৩,মুজিব হত্যার আগে থেকেই তাঁর বিরূদ্ধে নানা অপপ্রচার ছিল।একশ্রেণীর বৃটিশ ও মার্কিন পত্রিকায় বলা হয়,তিনি দুর্নীতি পরায়ণ।তিনি তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কে হত্যা করেছেন।লন্ডনে তাঁর দুটি বাড়ি।বিদেশী ব্যাংকে তাঁর টাকা রয়েছে ইত্যাদি।

লেখক বলছেন,

“মুজিব হত্যার পর ধর্মের কল বাতাসে নড়তে শুরু করেছে।তার বাড়ি তল্লাশি করে ৩০ হাজার টাকার অচল নোট পাওয়া গেছে।প্রমাণ হল ১০০ টাকার নোট অচল ঘোষনা করার সময় তিনি তাঁর স্ত্রী পুত্র কেও ব্যাপারটি জানতে দেন নি।আর তাঁর পরিবারের ২২ জনের একাউন্টে পাওয়া গেছে মাত্র ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা।মোশতাক সরকার প্রথমে তাঁর বাড়িতে সাত লাখ টাকার হিরা জহরত পাওয়া যায় বলে রটিয়েছিল।দেখা গেল তা লাখ তিনেকের অলংকার।দুই ছেলের বিয়েতে অন্য রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রির যে উপহার পাঠিয়েছিলেন-এসব হচ্ছে তা।

বাংলাদেশ মুক্ত হওয়ার পর সন্ত্রাসবাদী দল গুলোর বহু যুবক গুপ্ত হত্যা বা থানা লুট করতে গিয়ে রক্ষীবাহিনির হাতে মারা গেছে একথা সত্য।কিন্তু বিরোধী দলিয় কোন নেতা বা কর্মী যাদের হত্যা করা হয়েছে বলা হয়,তাদের মুজিবের আদেশে হত্যা করা হয়েছে এমন প্রমাণ করা যায়নি,তাদের নামের তালিকাও কেউ প্রকাশ করেনি।

মুজিব শাসনামলে একমাত্র সন্ত্রাসবাদি নেতা সিরাজ শিকদার পুলিশের হাতে ধরা পরার পর মারা যান।ভারতের নেতা চারু মজুমদার ও পুলিশের হাতে মারা যান,তার জন্য কেউ ইন্দিরা গান্ধী কে দোষারোপ করেন নি।তেমনি মুজিব ও সিরাজ শিকদার কে হত্যা করার আদেশ দেননি।ওটা ছিল অতি উৎসাহি পুলিশ অফিসার দের বাড়াবাড়ি।”

 

এটা হল লেখকের বক্তব্য।তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি সরাসরি আদেশ না করলেও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে এর দায়ভার তাকে বহন করতেই হবে।তার মানে এই না যে মুজিবের নির্দেশে বা তার ইচ্ছায় এই হত্যাকান্ড হয়েছে।

 

 

জিয়ার সাথে ঠিক মির জাফরের না জগৎশেঠের তুলনা করা যায়।জিয়াউর রহমানের প্রচারণা ও মিথ্যাকে সত্য বানানোর ক্ষমতা প্রশংসা(!) করার মত।

যদি কোন বাচ্চাকে প্রশ্ন করা হয়,মুক্তিযুদ্ধের একজন নেতার নাম বলতো যে না থাকলে দেশ স্বাধিন হতনা?বাচ্চারা প্রথমে বঙ্গবন্ধুর কথাই বলবে।কিন্তু যদি বলি আরেকজনের নাম বল,তাহলে উত্তর দিবে জিয়াউর রহমান।

অথচ মুজিবের পর কারো নাম আসলে সেটা হবে তাজুদ্দিন আহমেদ।জিয়ার নাম আসবে আরো অনেক পরে,তাও নেতা হিসেবে না একজন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে।

 

কিন্তু তিনি ও পরে তাঁর দল বিএনপি তাকে যেভাবে স্বাধীনতার ঘোষক বানিয়ে দিয়েছে তাতে মনে হয়েছে জিয়ার বক্তব্য শুনে সবাই যুদ্ধে লাফিয়ে পড়েছে!

 

এবার দেখে আসি সে সময়ের প্রত্যক্ষ দর্শীরা এ ব্যাপারে কি বলেন-

 

আমি মূলত যে বইটি অনুসরণ করে এই লেখাগুলো লিখছি সেই বই থেকেই প্রথমে উদ্ধৃত করছি।

 

লেখক আমাদের বলছেন-

“১৯৭১ এ যদি আমার মুক্তিযুদ্ধে সামান্য ভূমিকা না থাকত কিংবা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকত তাহলে আমিও এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হতাম।৭১ এ মুজিব যখন বন্দি এবং মুক্তিযোদ্ধারা চারিদিকে বিশৃংখল ও অসংগঠিত;সেই সুযোগে জিয়া চেয়েছিলেন বেতার মারফত নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষনা করে ক্ষমতা দখল করতে।স্বাধীনতা তিনি ঘোষনা করেননি।আওয়ামি লীগের কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা দের চাপে তিনি প্রথম ঘোষনার পর বঙ্গবন্ধুর নাম যোগ করে দ্বিতীয় ঘোষনা প্রচার করেন,সেখানেও তাঁর ভূমিকা একজন পাঠক মাত্র।”

৭১ এ স্বাধীন বাংলা বেতারে ‘চরম পত্র’ নামে একটি অতি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান প্রচারিত হত।এর লেখক ও পাঠক ছিলেন এম আর আখতার মুকুল।তিনি তাঁর ‘আমি বিজয় দেখেছি’-বইয়ে বলেছেন একই কথা।তার বই থেকে আমরা জানতে পারি ২৫ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমনের পর বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষনা পত্র টি টেলিফোনে সেন্ট্রাল টেলিগ্রাফ অফিসে জানান।সেখান থেকে এটি চট্টগ্রামের এম এ হান্নান এর কাছে পৌছায় যা তিনি বেতারে পাঠ করেন।

স্টাফ আর্টিস্ট বেলাল মোহাম্মদ (সম্প্রতি প্রয়াত) এর নেতৃত্বে একদল বেতার কর্মী কালুরঘাটে ট্রান্সমিটার স্থাপন করে সন্ধ্যা ৭ টা ৪০ মিনিটে অল্প সময়ের প্রচারণায় ঘোষনা পত্রটি প্রচারের ব্যবস্থা করেন,এটি পাঠ করেন অধ্যাপক আবুল কাশেম।পরদিন ২৭ মার্চ মেজর জিয়া ঐ ঘোষনা টি পাঠ করেন।

যেহেতু যুদ্ধ টি সামরিক তাই একজন সামরিক অফিসারের দ্বারা ঘোষনাটি প্রচারের আলাদা গুরুত্ব ছিল।তবে ঐ সময় জিয়ার বদলে অন্য কোন অফিসার ওখানে থাকলে তিনি ঐ ঘোষনা পাঠ করতেন।

 

এখন ফিরে আসি স্বাধীন বাংলাদেশে।

 

‘ইতিহাসের রক্তপলাশ পনেরই আগস্ট পচাত্তর’-বই এ লেখক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন।

লেখকের মতে,৭১ এর আগে দেশে যে আমলা,এলিট শ্রেণী ও বাঙালি সামরিক অফিসার ছিল তাদের বেশির ভাগই দেশপ্রেম থেকে নয়,ব্যক্তিগত লাভের জন্য মুজিব কে সমর্থন করেছেন।কারণ শুধু মাত্র বাঙালি হওয়ার কারণে তারা পাকিস্তানে পদোন্নতি ও অন্যান্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল।

এটা কোন সমস্যা নয়।সমস্যা হয় স্বাধীনতার পরে।

এই শ্রেনিটি  একটি নতুন দেশে ক্ষমতাবান হয়ে ওঠে।আগেও তারা ক্ষমতার স্বাদ কিছুটা পেয়েছে বলে সদ্য স্বাধীন নতুন দেশেও তারা এই ক্ষমতার পূর্ণতা পেতে চাইল।স্বাধীনতার পর প্রথমে তাজুদ্দিন এবং পরে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের আমলাতন্ত্র বহাল রাখে।সাধারন মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহনকারী ও অংশ না নেয়া সামরিক অফিসার দের নিয়েই সামরিক বাহিনী গঠন করা হয়।ফলে সামরিক বাহিনী তেও স্পষ্ট বিভক্তি সৃষ্টি হয়।

 

তো এই অস্থির অবস্থায় মেজর জিয়া অনেক সাবধানতা ও ধূর্ততার সাথে নিজেকে ধীরে ধীরে ক্ষমতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

মুজিব নিহত হলেন।ঘটনার খানিক পর কর্ণেল রশীদের ফোন পান সেনানিবাসে অবস্থানরত ব্রিগেডিয়ার শাফায়াত জামিল। ঘটনায় হতভম্ব ও উদভ্রান্ত অবস্থায় তিনি ছুটে যান কাছেই উপ সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের বাসায়। উত্তেজিত অবস্থায় দরজা ধাক্কাতে থাকেন তিনি, বেরিয়ে আসেন জিয়া। পরনে স্লিপিং ড্রেসের পায়জামা ও স্যান্ডো গেঞ্জি। এক গালে শেভিং ক্রিম লাগানো। শাফায়াত উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললেন, দ্য প্রেসিডেন্ট ইজ কিল্ড। শুনে জিয়া অবিচলিত। তার শান্ত প্রতিক্রিয়া- প্রেসিডেন্ট ইজ ডেড সো হোয়াট? ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার। গেট ইউর ট্রুপস রেডি। আপহোল্ড দ্য কনস্টিটিউশন। এই সংবিধান সমুন্নত রাখার নির্দেশনা মানে এই নয় যে খুনেদের গ্রেপ্তার, বরং তাদের সার্বিক সহায়তা- যার প্রমাণ মিলেছে পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে।

 

বিবিসির সৈয়দ মাহমুদ আলী তাঁর UNDERSTANDING BANGLADESH বইয়ের ১১১ পৃষ্ঠায় বলেছেন-

 

মূল ষড়যন্ত্র কারী মেজর ফারুক জিয়াউর রহমানের কাছে ২০ মার্চ,১৯৭৫ অভিযানের নেতৃত্ব কামনা করেন।তিনি তাতে অসম্মত হন কিন্তু মেজর দের থামানোর চেষ্টা তিনি করেন নি। 

অর্থাৎ জিয়া পুরো পরিকল্পনা জানতেন কিন্তু এতে সরাসরি জড়াতে চাননি কারন তিনি জানতেন এতে পরবর্তীতে তিনি বিপদে পড়তে পারেন।তার লক্ষ ছিল আরো দূরে এবং সে জন্য তিনি খুব সাবধানে আগাতে আগ্রহি ছিলেন।

 

মুজিব হত্যাকান্ড সম্পর্কে জিয়া আসলে কতখানি জানতেন তার একটি বিস্তারিত উল্লেখ পাওয়া যায় লরেন্স লিফশুলজের ‘এনাটমি অব আ ক্যু’নামের প্রতিবেদনটিতে। সেখানেও উল্লেখ আছে ১৯৭৬ সালের আগস্টে সানডে টাইমসের সাংবাদিক মাসকারেনহাসের নেওয়া সাক্ষাতকারটির। আর এতে ফারুক ও রশীদ স্পষ্টই বলেছেন অভুত্থানের মাসছয়েক আগে থেকেই মোশতাক এবং জিয়ার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হচ্ছিল। শেখ মুজিবের সম্ভাব্য হত্যাকান্ড সম্পর্কে তাদের মধ্যে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। লিফশুলজ জানাচ্ছেন ফারুকের বর্ণিত ২০ মার্চের অনেক আগেই জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিলো ঘাতকদের।

জিয়া তাদের বলেছিলেন- ‘একজন সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে এতে আমার যোগ দেওয়ার সম্ভব নয়, তবে তোমরা জুনিয়র অফিসাররা যদি কিছু করতে চাও, করো। আমি বাধা দেবো না।’ এই যে সবুজ সংকেত, এটাই ছিল ফারুক-রশীদদের জন্য আশীর্বাদ। লিফশুলজ তার সেই সোর্সের বরাতে এও জানিয়েছেন যে মোশতাক নয়, ফারুক রশীদদের ই্চ্ছে ছিলো অভ্যুত্থানের একটা পূর্ণাঙ্গ সামরিক রূপ দিতে। অর্থাৎ মুজিব হত্যার পর একটি মিলিটারি কাউন্সিল গঠন করে দেশ শাসন। আর এর নেতৃত্বে জিয়াই ছিলো তাদের একমাত্র এবং গ্রহনযোগ্য পছন্দ।

 

জিয়া তার সত্যিকার অভ্যুত্থানটি ঘটিয়েছিলেন ২৩ নভেম্বর, ১৯৭৫।

সম্ভাব্য শেষ প্রতিপক্ষ কর্ণেল তাহের। গ্রেপ্তার হন তিনি। ফাসির মঞ্চে ওঠার আগে জিয়াকে বিশ্বাসঘাতক বলে প্রকাশ্যেই জবানবন্দী দিয়ে গেছেন তাহের। বঙ্গবন্ধু সে ঘোষণার সুযোগ পাননি। তবে আমরা এখন জানি, মৃত্যুর আগে জেনে গিয়েছিলেন তিনিও।

 

 

যে তাহের জিয়া কে বাচিয়ে ছিল সেই তাহের কে হত্যা করতে বিন্দু মাত্র কাপেনি জিয়া।

 

তবে স্বয়ং ঘাতক দের বিবরণ থেকেই জানা যায় জিয়া হত্যা কান্ডের  সাথে জড়িত ছিলেন।

বাংলাদেশে মরণোত্তর বিচারের ব্যবস্থা নেই,থাকলে মোশতাকের সাথে জিয়ার ও বিচার হতে পারত।

 

জিয়ার ভূমিকা জানার জন্য এই ভিডিও টি দেখার অনুরোধ রইল,এতে আরো অনেক কিছু পরিষ্কার হবে-

http://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=_RphqDEsLhQ

 

এটি লে.কর্ণেল (অব.) নুরুন্নবী বীরবিক্রমের এক সাক্ষাতকার।

 

৭৫ পরবর্তী রাজনীতি আমার আলোচনার বিষয় বস্তু না।নাহলে আরো কিছু অপকর্ম তুলে ধরতাম।

তো তাঁর দল বিএনপি যে জামাতের সংগ ছাড়তে পারছেনা এতে অবাক হওয়ার কিছু নাই।

 

আশা করি জিয়ার ভূমিকা নিয়ে সবাই পরিষ্কার(যারা ইচ্ছা করে অপরিষ্কার থাকতে চায় তাদের জন্য আমার কিছু করার নাই)।

 

এর পরের পর্ব লিখব মুজিব হত্যায় বিদেশি শক্তির ভূমিকা নিয়ে।

সত্য জানুন,অন্যকে জানান।অপপ্রচারের দাঁত ভাঙা জবাব দিন।

 

মুজিব হত্যার প্রেক্ষাপটে যে কয়টি বিদেশি শক্তি দৃশ্যপটে এসেছে তার মধ্যে পাকিস্তান,ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ।পরাজিত শক্তি পাকিস্তান যে প্রতিশোধ নিতে চাইবে এটা তো নিশ্চিত।আর সব থেকে বড় ভূমিকা যে দেশ টির সেটা হল মার্কিন যুক্ত্রাষ্ট্র।বাংলাদেশের জয় তাদের জন্য অপমান জনক ছিল।কেননা বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা ও পাকিস্তানীদের কে প্রত্যক্ষ সহযোগিতার পরও বাংলাদেশ জয় লাভ করে।তার প্রতিশোধও তারা নিতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক।বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয় সম্প্রতি প্রথমা থেকে প্রকাশিত মিজানুর রহমান খান রচিত ‘মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকান্ড’ বইটি থেকে।বইটিতে লেখক বিভিন্ন সময়ে ফাস হওয়া দলিল থেকে আমাদেরকে মার্কিন সম্পৃক্ততা দেখিয়েছেন।

 

আবার ফিরে আসি আব্দুল গাফফার চৌধুরির কাছে।তিনি আমাদের কে জানাচ্ছেন,মুজিব হত্যার প্রধান ব্যক্তিবর্গ -মোশতাক সহ অনান্যদের সাথে মার্কিনি যোগসাজশ ছিল সেই মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই।ভারতে অবস্থিত অস্থায়ি বাংলাদেশের সরকারের দপ্তরে মোশ্তাকের সাথে দেখা করতে আসতেন মার্কিন কর্মকর্তারা।আমেরিকা এক দিকে অস্ত্র দিয়ে পাকিস্তানিদের সাহায্য করছে অন্যদিকে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য পাঠাচ্ছে নানা রকম ত্রান সামগ্রি!কলকাতার সার্কাস এভিনিউতে ছিল মোশতাকের অফিস।মোশতাক তখন মার্কিনি পরামর্শে যুদ্ধ থামিয়ে আলোচনা করার জন্য জোড় প্রচার চালাচ্ছিলেন,সেই সাথে অস্থায়ি সরকারকে বিতর্কিত করার ষঢ়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।

 

লেখক বলেছেন-

আমেরিকা দুদিকেই থাকবে।তার সমর্থন যদিও পাকিস্তানের ক্ষুদে পেন্টাগনের দিকে তবু বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামেও তারা ‘সেল’ তৈরি করে রাখবে ভবিষ্যতে কাজে লাগাবার আশায়।

 

বলাই বাহুল্য কথাটি পরবর্তীতে সত্যতে পরিণত হয়।লেখক আরো বলেছেন-

 

মুজিব হত্যার পর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সূত্র থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যায় তা থেকে অনুমান করা সম্ভবত অসংগত নয় যে ৭১ সালেই মেজর জিয়া সিআইএ এর খপ্পরে পড়ে যান।সম্ভবত গোড়ার দিকে তারা মেজর জলিলের উপর ভরসা করতে চেয়েছিল।পাকিস্তান সেনা বাহিনীতে সিআইএ এর অনুপ্রবেশ ১৯৬৫ সালেই।মুজিব হত্যার বীজও রোপিত হয় তখন থেকেই।

 

আর এখন উইকিলিকস থেকে ফাস হওয়া দলিলের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত ভাবেই ব্যাপার গুলো জানি,আমাদের আর লেখকের মত ‘সম্ভবত’ বলা খাটেনা।

 

এবার আমরা সরাসরি ‘ইতিহাসের রক্ত পলাশ’ বইটি থেকে কিছু অংশ দেখে আসব।

 

“তৃতীয় বিশ্বের যেসব দেশে মার্কিনি পেন্টাগন জাতীয়িতাবাদি ও বৈধ সরকারকে উচ্ছেদ করতে চায় সেসব দেশে তারা একটা নীতি সাধারন ভাবে মেনে চলে।তা হল,একই তাবেদার কে তারা দুবার ব্যবহার করেনা।প্রয়োজন ফুরালে কমলার খোসার মতন তাদের ফেলে দেয়,হত্যা করতেও দ্বিধা করেনা।সুতরাং বাংলাদেশে মুজিব হত্যা চক্রান্ত সফল হওয়ার পর দেশিয় তাবেদাররা পরিত্যক্ত হবে,খুনী সামরিক অফিসারদের দেশ ছাড়া হতে হবে এটাই তাদের স্বাভাবিক পরিণতি।অদূর ভবিষ্যতে যদি কারো অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় তাতেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই।চক্রান্তের মূল নায়ক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকেও বেশিদিন ক্ষমতায় রাখা হবেনা।”

 

আমেরিকার দ্বৈর নীতির একটি উদাহরণ মুক্তিযুদ্ধের আগেই  দেখা গিয়েছিল।২৩ মার্চ,১৯৭১।দেশের সর্বত্র উড়লো নতুন জাতিয় পতাকা।সবুজের মধ্যে রক্তিম সূর্য।সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলাদেশের মানচিত্র।দোকান,বাড়িতে এমন কি সরকারি অফিসে পর্যন্ত নতুন এই পতাকা।স্বাভাবিক ভাবেই বিদেশি দূতাবাস গুলোর দিকে সবার নজর।বৃটিশ ডেপুটি হাই কমিশনে দেখা গেল বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে।ফরাসি ও চিনা দূতাবাসে পাকিস্তানি পতাকা উড়ছিল।বিক্ষুব্ধ জনতা সেই পতাকা নামিয়ে আগুন ধরিয়ে দিল।আর মার্কিন দূতাবাসে কেবল দেখা গেল তারা শুধু নিজেদের পতাকাই উড়িয়েছে,বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তান কারো পতাকাই উড়ায়নি!

 

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এবং পাকিস্তানের ভুট্টো যে বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্রে জড়িত, এর প্রমাণও রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রবল প্রতাপশালী দেশের বিরোধিতা সত্ত্বেও মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। কিসিঞ্জারের সাবেক স্টাফ অ্যাসিস্ট্যান্ট রজার মরিস এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবের প্রতি তার (কিসিঞ্জার) ঘৃণার কথা স্বীকার করেছেন। মরিস জানান, ‘শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে কিসিঞ্জার তার ব্যক্তিগত পরাজয় বলে মনে করতেন। কিসিঞ্জারের বিদেশি শত্রুর তালিকার সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তিরা হচ্ছেন আলন্দে, থিউ ও মুজিব। এ তিনজন তার বিভিন্ন পরিকল্পনা ভ-ুল করে দেন। মুজিব ক্ষমতায় আসেন সবকিছু অগ্রাহ্য করে। আমেরিকা ও তার অনুগ্রহভাজন পাকিস্তানকে সত্যিকারভাবে পরাজিত করে এবং মুজিবের বিজয় ছিল আমেরিকার শাসকবর্গের পক্ষে অত্যন্ত বিব্রতকর।’ (বাংলাদেশ : দি আনফিনিশড রেভলিউশন, লরেঞ্জ লিফসুলজ পৃ. ১৩৬-১৩৮)

 

মুজিব হত্যার পরপর ই এই মার্কিনি সংশ্লিষ্টতার খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার খবর প্রকাশ বন্ধে ভারতের সংবাদমাধ্যমের ওপর জরুরি ভিত্তিতে বিধিনিষেধ আরোপে দেশটির সরকারের প্রতি চাপ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা।

১৯৭৫ সালে সামারিক অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্টের মৃত্যু পরের মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তারবার্তায় বিষয়টি উঠে আসে।গোপন এক তারাবার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার দিল্লিতে তার দূত মারফত ভারত সরকারকে জানান, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আমরা আশা করি।

’১৯৭৫ সালের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করেন এবং সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় এমন সংবাদ প্রকাশে শহরের সব ধরনের পত্রিকা ও সংবাদ সংস্থার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।সোমবার উইকিলিকস প্রকাশিত ১৯৭৩-৭৬ সালের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রায় ১৭ লাখ তারবার্তার মধ্যে এ সংক্রান্ত কিছু তারবার্তায় এই তথ্য উঠে আসে। যদিও এগুলোকে ওই সময় গোপনীয় বলা হয়েছে, এখন সেগুলো উন্মুক্ত করা হয়েছে।

 

শেখ মুজিবকে হত্যার চার দিন পর ১৯৭৫ সালের ১৯ আগস্ট দিল্লিতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম স্যাক্সবে’র প্রতিবেদনে বলা হয়, দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত উপ-প্রধান ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবের কাছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছেন।স্যাক্সবে তারবার্তায় লিখেন, ‘তার সহকর্মী যুগ্ম সচিবকে বলেছেন- বাংলাদেশের সামরিক অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে জড়িয়ে ভারতের গণমাধ্যমে অব্যাহত অভিযোগের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নেব। এ ধরনের অভিযোগ অবমাননাকর ও ভারত সরকারের নিজস্ব বিধিনিষেধের লঙ্ঘন, এবং এটি যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’তারবার্তায় বলা হয়, ‘এধরনের অভিযোগ সংবাদ আকারে প্রকাশ বন্ধ করতে নিজস্ব বিধিবিধান প্রয়োগের পদক্ষেপ নিতে ভারত সরকার কেন প্রস্তুত নয় তা আমাদের বোধগম্য নয়। বাংলাদেশের ব্যাপারে লেখালেখির ক্ষেত্রে বিদেশি প্রতিনিধিদের সতর্ক করেছে ভারত সরকার। সুতরাং দূতাবাস আশা করে, নিজেদের সংবাদকর্মীদের বিষয়েও অন্তত তারা একই কাজটি করবে।’এরও দুদিন পর ২১ আগস্ট স্যাক্সবে আরও একটি তারবার্তা পাঠান। এতে ভারতের ব্লিটজ ম্যাগাজিনে মুজিব হত্যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা- সিআইএ’র সংশ্লিষ্টার অভিযোগ এনে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সমালোচনা করা হয়।এতে তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যায় মিসেস গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে প্রতিবেদনটি আলোচনায় আনার পরিকল্পনা করেছেন সিনেটর ইয়াগলেটন।’এ সময় সিনেটর ইয়াগলেটনকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়ার ঘটনাকে অবিশ্বাস রকমের মানসিক রোগ বলে ভারত সরকারের সমালোচনা করেন রাষ্ট্রদূত, কারণ তখনও ব্লিটজের মতো অবমাননাকর এবং সম্ভব্য ভয়ঙ্কর ধরনের অপপ্রচারকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছিল।

 

এর তিন মাস পর কলকাতার দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ দূতাবাসের ১৮ নভেম্বরের একটি তারবার্তায় রাষ্ট্রদূত বোস্টারকে ১৫ আগস্টে মুজিবের পতনের জন্য দায়ী করা হয়। ‘একটি বন্ধুভাবাপন্ন হিসেবে স্বীকৃত দেশের সরকারি দলের নিয়ন্ত্রিত পত্রিকায় এ ধরনের আক্রমণ হজম করা কঠিন’ তারবার্তায় বলা হয়।এর জবাবে দুদিনের মধ্যে দিল্লি দূতাবাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই তারবার্তা পাঠান। ২০ নভেম্বরের তারবার্তায় হেনরি কিসিঞ্জার লিখেন, উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাবস ওয়াশিংটনে ভারতীয় মিশনের উপ-প্রধানকে জানান, ‘রাষ্ট্রদূত বোস্টারের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক অভিযোগ দায়িত্বজ্ঞানহীন ও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ এবং তার উচিত নয়াদিল্লিকে জানানো- ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগে থেকেই পদেক্ষপ নেয়া হবে আমরা এমনটাই আশা করছি।’ ‘তোমারও উচিত একই উদ্যোগ নেয়া’- একথা বলে তারবার্তাটি শেষ করেন কিসিঞ্জার।যুক্তরাষ্ট্র শহরটির (কলকাতা) ‘অধিকাংশ কুৎসিত আলোচনার’ বিষয়বস্তু- রাষ্ট্রদূত এমন ধরনের একটি তারবার্তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর দুই সপ্তাহ পর যুগান্তরের প্রতিবেদনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস।

 

৬ নভেম্বর লেখা তারবার্তায় ডেভিস ইউগিন বোস্টার বলেন, ’১৫ আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল এমন ধারণা ওই ঘটনার পর ব্যাপক প্রচার পায়। মোশতাক আহমেদের পশ্চিমাপন্থী এবং সোভিয়েত ও ভারত বিরোধী  পরিচিতি রয়েছে।এছাড়া সব বড় ঘটনায় অদৃশ্য (বিদেশিদের) হাত খোঁজার বিষয়ে বাঙালিদের মধ্যে তীব্র প্রবণতা দেখা যায় এবং মনে করা হয়, যেকোনোভাবে বা উপায়ে মুজিবকে উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা রেখেছে।’এরপর তিনি বর্ণনা করেন, সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত ফোমিন থেকে উৎসাহ নিয়ে পরিচিতি পাওয়ায় বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূত নিকোলাই বোয়াদজিভ কিভাবে একজন কূটনীতিককে বলেন, ‘মুজিবের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আর কোন দেশের কোনো লাভ হয়েছে?’ এবং তিনি অভিযোগ করেন, ‘চিলির ঘটনার সময়ও রাষ্ট্রদূত বোস্টার সেখানে ছিলেন।’আরেকটি তারবার্তায় বোস্টারকে তার সহকর্মীদের বলতে দেখা যায়, ‘১৯৬৩ সালে তিনি একটা সময় চিলিতে তিন দিন ছিলেন। তবে তাকে সেখানে নিয়োগ দেয়া হয়নি।’২০০৬ সালে বোস্টারের মৃত্যুর পরপরই সাংবাদিক লরেন্স লিফসুজ রাষ্ট্রদূত নিজেই তার ‘দ্য আনফিনিশড রেভ্যুলেশন’ বইয়ের সোর্স ছিলেন বলে দাবি করেন। এতে অভিযোগ করা হয়, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের যোগাযোগ ছিল।

 

বিদেশিদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যায় সবচেয়ে বেশি উল্লসিত হন পাকিস্তানের ভুট্টো। ১৫ আগস্ট মুজিব হত্যার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তান বাংলাদেশের খুনি সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। বঙ্গবন্ধু হত্যায় খুশিতে ডগমগ ভুট্টো তাৎক্ষণিকভাবে মীরজাফর মোশতাক সরকারকে ২ কোটি ডলার মূল্যের ৫০ হাজার টন চাল ও দেড় কোটি গজ কাপড় দেয়ার কথা ঘোষণা করে। কিন্তু কিসিঞ্জার-ভুট্টোরা বাংলাদেশের খুনিদের দিয়েই হত্যাকান্ডটি ঘটায়।

 

দেশিয় পরাজিত শক্তির সাথে বিদেশি এই অপশক্তি গুলো মুজিব হত্যার মাধ্যমে দেশকে ডুবিয়ে দেয় শত বছরের অন্ধকারে,আমরা সরে যাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বহুদূরে।

 

আজ আর নয়।এর পরবর্তী পর্বে আমরা পুরো বিষয়টি সামগ্রিক ভাবে দেখার চেষ্টা করব এবং বর্তমান বাংলাদেশে এর কিরূপ ভূমিকা আছে সেটা বোঝার চেষ্টা করব।

 

“যতকাল রবে মেঘনা,পদ্মা,গৌরি,যমুনা বহমান,

ততোকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান…”

 

গত ১৫ আগস্টে কি মনে করেই যেন বহুদিন পড়ে থাকা আব্দুল গাফফার চৌধুরির লেখা ‘ইতিহাসের রক্তপলাশ পনেরই আগস্ট পঁচাত্তর’ বইটি পড়ে শুরু করেছিলাম।পড়ে আমার সামনে খুলে গেল একজন প্রত্যক্ষদর্শীর দেখা ইতিহাস।আমার মনে হল সবাই হয়তো এই বইটা পড়েনি।প্রবল আগ্রহ বোধ করলাম সবাইকে জানানর।ইচ্ছা হচ্ছিল চীৎকার করে বলি-সবাই শোন সেই বেঈমানির কাহিনী,সবাই শোন জাতির পিতার পবিত্র রক্ত কিভাবে দেশের মাটি ছুয়েছিল।

 

সেই তাগিদ থেকেই ধারাবাহিক ভাবে এই শিরোনামে লেখাটি লিখে গেছি।ফেসবুকে নোট সহ আরো দুটি ব্লগে লেখা গুলো ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করেছি আর পেয়েছি অভূতপূর্ব সারা।সবাই লেখাটি চালিয়ে যাবার জন্য উৎসাহি করার পাশাপাশি আরো অনেক তথ্যসূত্র দিয়ে সাহায্য করেছেন।যে যেই বইয়ের নাম বলেছেন আমি সেটা জোগাড় করে পড়ার চেষ্টা করেছি-ফলে অনেক সময় বিলম্বও ঘটেছে।যাই হোক আজ এই লেখাটির ৬ষ্ঠ ও শেষ পর্ব।

 

প্রথম পর্বে আমি আমি বঙ্গবন্ধুর কিছু উদ্ধৃতি উল্লেখ করে প্রেক্ষাপট তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।সেখানে মার্কিনি ষঢ়যন্ত্রের আভাষ যে বঙ্গবন্ধু পেয়েছেন সেটাও ফুটে উঠেছিল।

দ্বিতীয় পর্বে আমি বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনের প্রধান কারিগর বেঈমান মোশতাকের ভূমিকা আলোচনা করেছি।একই সাথে দেখিয়েছি অবিসংবাদি নেতা তাজউদ্দিন আহমেদের অসাধারণ নেতৃত্ব।বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে এই মানুষটি কি করে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন সেটা সবাইকে একটু ধারণা দিতে চেয়েছি তথ্য প্রমাণের আলোকে।

এর পরের পর্বে আমি বঙ্গবন্ধু ও স্বাধিনতা পরবর্তী মুজিব সরকারের বিরূদ্ধে প্রচলিত কিছু অপপ্রচারের জবাব দিয়েছি তথ্য প্রমাণের আলোকে।সেখানে উঠে এসেছে বাকশাল,রক্ষি বাহিনী সহ অন্যান্য অপপ্রচারের কথা।

চতুর্থ পর্বে আমি তুলে ধরতে চেয়েছি মুজিব হত্যার পিছনে জিয়াউর রহমানে কতটুকু ভূমিকা ছিল সেটি।সেখানে দেখা যায় মুজিব হত্যার পিছনে জিয়াউর রহমানের বেশ শক্তিশালী ভূমিকা ছিল এবং বাংলাদেশে মরনোত্তর বিচারের ব্যবস্থা থাকলে মোশতাকের সাথে সাথে জিয়াউর রহমানেরও বিচার হতে পারতো।

পঞ্চম পর্বে আমরা দেখেছি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পিছনে বিদেশী অপশক্তি গুলোর ভূমিকা কি ছিল।সেখানে আমরা দেখেছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সরাসরি ভূমিকা ছিল এই ঘটনার পিছনে।

 

গত পর্বে বলেছিলাম আজকের পর্বে আমরা নির্দিষ্ট কোন বিষয় না,বরং সামগ্রিক একটা পর্যালোচনা করার চেষ্টা করব।আসলে যতটুকু না বললেই নয় ততটুকুই এই লেখা গুলোতে বলা হয়েছে।এগুলো আমার মনগড়া কোন কথা নয়।আমি বিভিন্ন বই পত্র ঘেটে এবং ঐ সময়ের প্রত্যক্ষদর্শীদের লেখা গুলো (যাদের কে নির্ভর যোগ্য মনে হয়েছে) থেকে সাহায্য নিয়ে এই ধৃষ্টতা টুকু করেছি।এই কথা গুলো বিশ্বাস অবিশ্বাস নিতান্তই পাঠকের নিজের ব্যাপার।তবে এখন পর্যন্ত কোন পর্বের কোন তথ্য নিয়ে কেউ চ্যালেঞ্জ করেননি।কেউ যদি উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ সহ কোন তথ্যের অসাড়তা প্রমাণ করতে পারেন আমি অবশ্যই সেটা সম্পাদনা করব।

 

যারা আরো বিস্তারিত জানতে চান তাদের জন্য আমি সেই বই গুলোর নাম দিয়ে দিচ্ছি লেখার শেষে।আমি আশা করব সবাই সময় করে বই গুলো পড়ার চেষ্টা করবেন।কারণ আমি যে দৃষ্টিতে দেখেছি আপনি হয়তো ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে আরো ভাল কিছু উদঘাটন করতে পারবেন।সব থেকে বেশি যে বইটার উপর আমি নির্ভর করেছি সেটার কথা প্রথমেই বলেছি।’আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’গানটির গীতিকার আবদুল গাফফার চৌধুরি রচিত বইটি সবার পড়া উচিত বলে আমি মনে করি।

 

আবদুল গাফফার চৌধুরি সাহেব শুধু এই বইটিই লেখেননি তিনি এই ঘটনার উপর চমৎকার একটি নাটকও তৈরি করেছেন।যেখানে বঙ্গবন্ধু চরিত্রে অভিনয় করেছেন পীযুষ বন্দোপাধ্যায়।নাটকটির ইউটিউব লিঙ্ক-

 

http://www.youtube.com/watch?feature=player_detailpage&v=6_lPMNLuir4

 

একটা অনুষ্ঠানে আমি আবদুল গাফফার চৌধুরি সাহেব কে জিজ্ঞেস করেছিলাম এই নাটকটিতে যা যা দেখানো হয়েছে সব কি সত্যি?উনি বলেছিলেন যে ঐতিহাসিক সকল ঘটনা গুলোই সত্যি।বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত জীবনের সংলাপ গুলোতে তাঁকে কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়েছিল।

 

আমি সবাইকে অনুরোধ করছি সময় করে এটি দেখে নিতে,এতে বই না পড়লেও আপনার কাছে সব কিছু,সবার ভূমিকা পরিষ্কার হয়ে যাবে।এটি সিডি আকারেও কিনতে পাওয়া যায়।

 

 

মুজিব হত্যার ফল কী হয়েছিল সেটা আমাদের ইতিহাসই বলে দিচ্ছে।দেশ ডুবে যায় সামরিক শাসনের অন্ধকারে।যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধিন হয়েছিল তা হারিয়ে যায়।স্বাধিনতা বিরোধী শক্তি আবার পুণর্বাসিত হয়।যার কুফল ভোগ করছি আমরা এখন।৭৫ এর ১৫ আগস্ট যদি অন্ধকার আমাদের গ্রাস না করত তাহলে আজ সেই অন্ধকারের কীট জামাত শিবিরের দৌরাত্ম আমাদের দেখতে হতনা।কিন্তু ইতিহাসের অমোঘ পরিণতি কেউ এড়াতে পারেনা।বহু বছর পর হলেও আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে পেরেছি।বর্তমানে চলছে যুদ্ধাপরাধিদের বিচার।ধীরে ধীরে আমরা কলুষ মুক্ত হব।সেই সাথে অন্ধকারে বেড়ে ওঠা অশুভ শক্তিকেও প্রতিরোধ করা ছাড়া কোন উপায় নেই।মীর জাফর থেকে মোশ্তাকরা সব সময়ই ছিল এখনো আছে,সাবধান থাকতে হবে এদের থেকেও।

 

আজ আমি মূলত বিশেষ কিছু আলোচনা করিনি কেবল মাত্র বিগত পাচ পর্বের উপসংহার টেনেছি মাত্র।সবাই উৎসাহ দিয়েছেন বলেই আমি লেখাটি চালিয়ে যেতে পেরেছি।সেই সাথে এই বিষয়ের উপর ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে আমার আরো অনেক কিছু জানা হয়েছে,হয়তো কোন এক সময় সেগুলোও আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে আমি হাজির হব।

 

আমি শ্রদ্ধাবনত মস্তকে স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ ও বীরাঙ্গনা মা-বোনদের।স্মরণ করছি ১৫ আগস্টে নিভে যাওয়া প্রদীপ গুলোকে যারা কিনা আজ আমাদের আকাশে নক্ষত্র হয়ে আলো দিতে পারতেন।লেখকরা কেন কোন লেখা উৎসর্গ করে আমি জানিনা।আমি কোন লেখকও না।তবে আমার এই ধারাবাহিক লেখাটি যদি একজনেরও ভাল লেগে থাকে তাহলে আমি এই লেখা উৎসর্গ করছি ছোট্ট রাসেলের নামে।আজ বেঁচে থাকলে সে আমার থেকে বয়সে অনেক অনেক বড় হত কিন্তু এখন তো সে আমাদের সবার কাছেই ছোট্ট রাসেল,তাইনা?

 

জয় বাংলা

জয় বঙ্গবন্ধু…

 

(যে বই গুলো থেকে আমি তথ্য নিয়েছি-

১।ইতিহাসের রক্তপলাশ পনেরই আগস্ট পচাত্তর-আব্দুল গাফফার চৌধুরী-জ্যোৎস্না প্রকাশনী

২।মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকান্ড-মিজানুর রহমান খান-প্রথমা প্রকাশনী

৩।আমি বিজয় দেখেছি-এম আর আখতার মুকুল-অনন্যা প্রকাশনী

৪।বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত বক্তৃতা ও বিবৃতি–কথন প্রকাশনী

৫।মূলধারা ৭১-মঈদুল হাসান-দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড

৬।মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর-মঈদুল হাসান,এ কে খন্দকার ও এস আর মীর্জার সাক্ষাৎকার-প্রথমা প্রকাশনী।)

 

 

3 Comments

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান